Marquee 📢🔴❗শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি❗ 🔴❗৪৭তম বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় দারুল উলূম বালিপাড়া কওমী মাদরাসার বালক/বালিকা শাখার ফলাফল।❗🔴❗ ১৪৪৪-৪৫ হি. = ২০২৩-২৪ ঈ. সনের কওমী মাদরাসা আঞ্চলিক শিক্ষা বোর্ডের অধিনে অনুষ্ঠিত নূরানী, হিফজ ও বালক- বালিকা শাখার কিতাব বিভাগের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ❗🔴❗ বিগত ১৩ বছরের বেফাক পরীক্ষার ফলাফলের এক নজর ❗🔴❗ আসণ্ণ পবিএ মাহে রমজাণ উপলক্ষে নূরানী মুয়াল্লিম ও মুয়াল্লিমা প্রশিক্ষণ কর্মশালা ২৬ শাবান রমজান থেকে রমজান ১৪৪৪ হি. পর্যন্ত (মুয়াল্লিম) ❗🔴❗ ১৪৪৫-৪৬ হি. = ২০২৪-২৫ ঈ.শিক্ষাবর্ষের বালিপাড়া কওমী মাদ্রাসা ও তার শাখা প্রতিষ্ঠানসমূহের নতুন ও পুরাতন ছাএ / ছাএীদের ভর্তি ভর্তি চলছে ❗🔴❗ হাফেজ ছাত্রদের জন্য সু-খবর ❗🔴❗

বয়ানঃ শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী দা.বা.

সংকলনে: মুফতী মুহাম্মদ আব্দুল মালেক
প্রধান, ফতওয়া বিভাগ, ও মুহাদ্দিস
জামি‘আ মুহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া, বনানী, ঢাকা


✅ আমাদের যাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন 👉 https://bit.ly/3Dx64Ns

সফল মুমিনের তৃতীয় গুণ যাকাত প্রদান করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ
অর্থ: সফল মুমিন তারা, যারা যাকাত আদায় করে।

যাকাতের গুরুত্ব
এখানে উক্ত আয়াতের প্রসিদ্ধ তাফসীরের আলোকে আলোচনা করবো। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করে, তারা সফল মুমিন। যাকাত ইসলামের অন্যতম রোকন একথাটি কোনো মুসলমানের অজানা নয়। সুতরাং যাকাত নামাযের মতোই একটি ফরজ বিধান। পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে নামায ও যাকাতের আলোচনা একসাথে এসেছে। বলা হয়েছে
وَاَقِيْمُوْا الصَّلوةَ وَاَتُوْا الزَّكَوةَ
‘আর তোমরা নামায কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো।’
তবে নামায হলো দৈহিক ইবাদত আর যাকাত আর্থিক ইবাদত।

যাকাত আদায় না করার শাস্তি
যাকাত পরিত্যাগকারীর পরিণাম ভয়াবহ। যেমন আল¬াহ্ তা’আলা বলেছেন
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿﴾ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿﴾
অর্থাৎ- যারা সোনা-রুপার স্তুপ পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, অর্থাৎ মহান আল্লাহ যেসব পাত্রে সম্পদ ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে খরচ করে না। যেমন-সদকাতুল ফিতর, কুরবানী ও দুস্থদের প্রতি ব্যয় করার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। এরা এসব পাত্রে ব্যয় করে না। এদের জন্য অতিকায় মর্মন্তÍদ শাস্তির সংবাদ দিন। সুরা তাওবা : ৩৪-৩৫
তারপর পরবর্তী আয়াতে শাস্তির বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, এরা যেসব অর্থ-বৈভব ও সোনা-রুপা জমা করে, এগুলো আগুনে উত্তপ্ত করা হবে। তারপর এগুলো দিয়ে তাদের কপালে দাগ দেওয়া হবে, যেমন লোহা আগুনে উত্তপ্ত করে স্ফুলিঙ্গ বানানো হবে। তারপর তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে এবং এদেরকে বলা হবে, এই সেই সম্পদ, যা তোমরা পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলেন। আজ তোমরা সম্পদের স্বাদ আস্বাদন করো। এই হলো যাকাত না দেওয়ার পরিণাম। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যাকাত ইসলামের একটি মহান বিধান।

যাকাতের উপকারিতা
যাকাতের উপকারিতা অপরিসীম। যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো, মহান আল্লাহর বিধান পালন করা। এ ছাড়াও আরো বহু উপকারিতা আছে। তন্মধ্যে একটি বিশেষ উপকারিতা হলো, যে-বান্দা যাকাত আদায় করে, মহান আল্লাহ তাকে সম্পদের ভালোবাসা থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। যার অন্তরে সম্পদের প্রতি ভালোবাসা থাকে, সে যাকাতের ধার ধারে না। কারণ, কৃপণতা ও সম্পদের ভালোবাসা মানুষের একটি দুর্বলতা। মহান আল্লাহ এর চিকিৎসা করেছেন যাকাতের মাধ্যমে।
যাকাতের দ্বিতীয় উপকারিতা এই, এর মাধ্যমে অসংখ্য গরিব উপকৃত হয়। আমি একবার হিসাব করে দেখেছি, পাকিস্তানে সকল সম্পদশালী-যাদের উপর যাকাত ফরজ- যদি তারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে, তাহলে এদেশের দারিদ্র্যবিমোচন আপনা-আপনি হয়ে যাবে। কিন্তু যা ঘটে, তাহলো এই- প্রথমত যাকাত দানকারীর সংখ্যা নিতান্ত কম। দ্বিতীয়ত, যারা যাকাত দেন, তারা ঠিকমত হিসাব করে দেন না। অনুমানের উপর কিছু যাকাত দেন। তৃতীয়ত, যারা যাকাতের হকদার, অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে দেয়া হয় না। মূলত যাকাত মানে ধনীদের সম্পদে গরিবদের হক। এ কারণে বড়-বড় প্রজেক্টে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করার অনুমতি শরীয়তে দেয়া হয়নি। কিন্তু যাকাতদাতারা এটা নিয়ে ভাবে না। বরং ইচ্ছামতো বিভিন্ন খাতে খরচ করে। ফলে গরিবরা বঞ্চিত থেকে যায়। এথচ ঠিকমতো হিসাব করে যাকাত বের করার পর যদি সঠিক খাতে ব্যয় করা হয়, তাহলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে নি:সন্দেহে।

যাকাত আদায় না করার কারণ
কিন্তু যাকাতের গুরুত্ব ইসলামে যে পরিমাণে রয়েছে এবং এর যে অসংখ্য উপকারিতা আছে, আমাদের সমাজের মানুষ সে সম্পর্কে অনবহিত। অনেককে দেখা যায়, তারা যাকাত দেয় না, তাদের অন্তরে ইসলামের ফরজ-ওয়াজিব ও অবশ্যপালনীয় বিধানগুলোর প্রতি কোনোই শ্রদ্ধাবোধ নেই। পয়সা আসছে আর গনীমত মনে করে যা-খুশি করছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলমানকে এহেন উদাসীনতা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
কিছু লোক আছে, যারা মনে করে, আমরা তো দ্বীনী কাজে খরচপাতি করি। কখনও এই কাজে, কখনও ওই কাজে টাকা-পয়সা দেই। সুতারাং আমাদের যাকাত এমনিতেই আদায় হয়ে যাচ্ছে। আলাদাভাবে হিসাব বের করার দরকার কী?
মাসআলা সম্পর্কে অজ্ঞতা
যাকাত কখন ফরজ হয়, অনেকে তাও জানে না। কার উপর যাকাত ফরজ হয়, এটাও জানে না। ফলে এরা মনে করে, আমাদের উপর যাকাত ফরজ নয়। অথচ তাদের উপর যাকাত ফরজ। তারা এটা এজন্য মনে করে যে, যাকাতের মাসআলা সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। ফলে জীবনভর যাকাত আদায় থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।

যাকাতের নিসাব
ইসলাম যাকাতের জন্য একটা ‘নিসাব’ নির্ধারণ করেছে। ‘নিসাব’ বলা হয় শরীয়ত নির্ধারিত সীমা বা পরিমাণকে। যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার উপর যাকাত ফরজ হবে। যাকাতের নিসাব হলো, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা। মার্কেট থেকে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দাম জেনে নিবেন। সুতারাং শরীয়তের বিধানমতে যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যপরিমাণ নগদ অর্থ থাকে কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যে স্বর্ণ বা ব্যবসায়িক পণ্য থাকে, তার উপর যাকাত ফরজ। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, উক্ত অর্থ প্রয়োজনীয় ব্যয়ের অতিরিক্ত হতে হবে। অর্থ্যাৎ- প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ব্যয় এবং স্ত্রী-সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বাদ দিয়ে যদি নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকে, তার উপর যাকাত ফরজ। অনুরূপভাবে ঋণ বাদে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকাও একটি শর্ত। অর্থাৎ- দেখতে হবে, আমার কাছে যে অর্থ আছে, তা ঋণ বাদ দিলে যদি অবশিষ্ট অর্থ নিসাব পরিমাণে না হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না। আর নিসাব পরিমাণে হলে যাকাত ফরজ হবে।

প্রয়োজনীয় ব্যয় দ্বারা কি উদ্দেশ্য
অনেকে মনে করে, আমার কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ অর্থ তো আছে, কিন্তু এটা আমি মেয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে রেখেছি। আর বিবাহ তো প্রয়োজনীয় ব্যয়ের অন্তর্ভুুক্ত। সুতারাং আমার কাছে যে অর্থ আছে, তার উপর যাকাত আসবে না। এই ধারণা ভুল। কারণ, প্রয়োজনীয় ব্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য, নিত্যদিনকার পানাহার ব্যয়। অর্থাৎ- ওই খরচ করলে তার কাছে পানাহারের জন্য কিছু থাকবে না। স্ত্রী- সন্তানের পানাহারের জন্য কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। সুতারং মেয়ের বিয়ের জন্য কিংবা বাড়ি বানানোর জন্য কিংবা গাড়ি কেনার জন্য যে অর্থ রেখে দিয়েছেন, সেগুলো ‘প্রয়োজনীয় ব্যয়’ ভুক্ত না বিধায় আপনার উপর যাকাত ফরজ যাকাত আদায়ের কারণে সম্পদ কমে না অনেকের ধারণা, মেয়ের বিয়ের জন্য যে অর্থ রাখা হয়েছে, তা থেকে যাকাত দিলে অর্থ শেষ হয়ে যাবে। এই ধারণও সঠিক নয়। কারণ, যাকাতের পরিমাণ তো একেবারে সামান্য। একশ’টাকায় মাত্র আড়াইটাকা। হাজার টাকায় মাত্র পঁচিশ টাকা যাকাত দিতে হয়। এটা খুবই সামান্য। তাছাড়া মহান আল্লাহর রীতি হলো, যে বান্দা আল্লাহর হুকুম পালন করে যাকাত আদায় করে, সে কখনও গরিব হয় না। উপরন্তু যাকত আদায়ের ফলে তার সম্পদের বরকত আসে। আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পদ আরো বৃদ্ধি করে দেন, এই মর্মে হাদীস শরীফে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অসাল্লাম চমৎকার একটি বাক্য বলেছেন- مَا نَقَصَتْ صَدْقَةٌ مِنْ مَالٍ ‘সদকা-যাকাত সম্পদ কমায় না।’

সুতারাং যে পরিমাণ সম্পদ যাকাত হিসাবে আদায় করা হবে, মহান আল্লাহ অন্তত ওই পরিমাণ সম্পদ দান করবেন। কমপক্ষে এতটুকু কাজ আল্লাহ তা‘আলা করবেন যে, যাকাত আদায়ের পর যে সম্পদ থাকবে, আল্লহ তা‘আলা তাতে বরকত দান করবেন, যেন ওই সম্পদ যদি হাজার টাকা হয়, তাহলে তা দ্বারা লাখ টাকার প্রয়োজন পূরণ হয়।

ফেরেশতার দু‘আর উপযুক্ত কে?
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা একজন ফেরেশতাকে একটি মাত্র কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। কজটি হলো, সে শুধু বিরামহীনভাবে দু‘আ করতে থাকবে-
اَلَّلهُمَّ اَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَ مُمْسِكًا تَلَفًا-
হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আপনার রাস্তায় খরচ করে- যাকাত দেয়, দান-সদকা করে, তাকে দুনিয়াতেই খরচকৃত মালের বিনিময় দান করুন। আর যে ব্যক্তি আপনার রাস্তায় খরচ করে না, বরং সম্পত নিজের কাছে ধরে রাখে, তার সম্পদ বরবাদ করে দিন।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ খরচ করলে আখেরাতে এর প্রতিদান অবশ্যই আছে। কিন্তু ফেরেশতা দু‘আ করছে, দুনিয়ার বিনিময়ের জন্য। সুতারাং এই ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে-উভয় জাহানে বিনিময় পাবে। সুতারাং যাকাত দিলে সম্পদ কমে- এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

যাকাত দেয়ার কারণে কেউ ফকির হয় না
যাকাতের কারণে কারো কোনো কাজ আটকে গেছে- এমন তো হয়নি। বরং আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, যাকাত দেয়ার কারণে কেউ আজ পর্যন্ত ফকির হয়নি। যাকাত দিয়ে সব খুইয়েছে-এরূপ দৃষ্টান্ত কেউ একটিও দেখাতে পারবে না।
হজের জন্য যে টাকা টাকা রাখা হয়েছে, তাতেও যাকাত আছে। সারকথা হলো, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ব্যায় বাদ দিয়ে যে অর্থ আপনার কাছে জমা আছে, তা যে কাজের জন্যই হোক যাকাত ফরজ হবে।

নিসাবের মালিকের উপর যাকাত ফরজ
প্রত্যেক মানুষের সম্পদের মালিকানা হিসাবে বিধান জারি হয়। যেমন- পিতা নিসাবের মালিক হলে, তখন তার মালিকানা হিসাবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। ছেলে মালিক হলে ছেলের উপর যাকাত ফরজ হবে। স্ত্রী নিসাবধারী হলে স্ত্রীর উপর যাকাত ফরজ হবে। সুতরং স্বামী তার সম্পদ থেকে, স্ত্রী তার সম্পদ থেকে যার যার যাকাত আদায় করা ফরজ। প্রত্যেকের মালিকানা স্বতন্ত্র ও ভিন্ন।

পিতার যাকাত আদায় সন্তানের জন্য যথেষ্ট নয়
অনেকে মনে করে, ঘরের কর্তা যদি যাকাত দেন, তাহলে সবার পক্ষ থেকে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তখন ঘরের অন্য সদস্যদের উপর যাকাত দেয়া জরুরি নয়। একথাটা সঠিক নয়। কেননা, যেমনিভাবে পিতা নামায পড়লে সন্তানের নামায আদায় হয় না, বরং সন্তানকে আলাদাভাবে নামায পড়তে হয় এবং যেমনিভাবে স্বামী নামায আদায় করলে স্ত্রীর নামায পড়া হয় না, বরং স্ত্রীকেও নামায আদায় করতে হয়, অনুরূপভাবে যাকাতেরও বিধান। পরিবারে যে-ই নিসাবের মালিক হবে, সে পিতা-সন্তান-স্বামী-স্ত্রী যে-ই হোক-না কেন, তার উপর নিজের মালিকানা থেকে যাকাত আদায় করা ফরজ।

সম্পদের উপর বছর অতিবাহিত হওয়ার মাসআলা
নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর বহাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। এটা শরীয়তের এক স্বত:সিদ্ধ মাসআলা। কিন্তু মাসআলাটা ভুল বোঝাবুঝি আছে। অনেকে মনে করে, প্রতিটি সম্পদ আলাদাভাবে এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে। অথচ মাসআলাটি এই অর্থে সঠিক নয়। বরং এক বছর থাকার অর্থ হলো, বছরব্যাপী নিসাবের মালিক থাকা। যেমন- কোনো ব্যক্তির কাছে পহেলা রমযানে নিসাব-পরিমাণ সম্পদ এলো। ফলে সে নিসাবের মালিক হলো। এখন যদি সেই ব্যক্তির কাছে বছরের অধিকাংশ সময় নিসাব-পরিমাণ সম্পদ থাকে, কিন্তু বছরের মাঝে এক দু‘মাস নিসাব থেকে কম থাকে, তাহলে এই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ। সম্পদের প্রতিটি অংশের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরি নয়। বরং আগামী রামাযানেরে প্রথম তারিখে যত টাকা বা যে পরিমাণ সোনা-রুপা কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য মালিকানায় থাকবে, তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়
কোন্ সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়, এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন। যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয় সেগুলো এই-
১. নগদ টাকা। তা ব্যাংক কিংবা বাড়ি যেখানেই থাকুক, এর উপর যাকাত ফরজ।
২. সোনা-রুপা বা এগুলো দ্বারা তৈরিকৃত অলংকারাদির উপর যাকাত আসে। চাই তা ব্যবহারাধীন হোক কিংবা সংরক্ষিত থাকুক সর্বাবস্থায় যাকাত ওই ব্যক্তির আসবে, যে এগুলোর মালিক। এ বিষয়ে আমাদের সমাজে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা আছে। তাহলো এই,ঘরের মহিলার কাছে যেসব অলংকার থাকে, সেগুলোর মালিক কে-স্বমী না স্ত্রী, এটা স্পষ্ট থাকে না। শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।

অলংকারের যাকাত আদায় করার পদ্ধতি
অলংকারের যাকাত আদায় করার পদ্ধতি হলো, অলংকার ওজন করে নিবে। যেহেতু যাকাত ফরজ হয় সোনার ওজনে, তাই অলংকারে যদি মনি-মুক্তা বা অন্য কোনো ধাতু লাগানো থাকে, তাহলে তা ওজনের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কাজেই দেখতে হবে অলংকারে খাঁটি সোনা কী পরিমাণ আছে। তারপর ওই ওজনটা কোনোখানে লিপিবদ্ধ করে যতœসহকারে রেখে দিবে যে, অমুক অলংকারের ওজনের পরিমাণ এই…..। তারপর যে তারিখে যাকতের হিসাব করতে হয়, উদাহরণস্বরূপ, যাকাতের হিসাবের তারিখ হলো রামাযানের প্রথম তারিখে, এই তারিখে মার্কেট থেকে সোনার মূল্য জেনে নিবে। মূল্য জানার পর হিসাব বের করবে যে, এই অলংকারে কী পরিমাণ মূল্যের সোনা আছে। ওই সমমূল্য থেকে একশ’ টাকায় আড়াই টাকা বের করে ওই হারে যাকাত দিবে। যেমন- সোনার মূল্য যদি এক হাজার টাকা হয়, তাহলে তার ওপর পঁচিশ টাকা যাকাত ফরয হয়। দুই হাজার টাকা হলে পঞ্চাশ টাকা। চার হাজার টাকা হলে একশ’ টাকা। এভাবে হিসাব করে একশ’ ভাগের আড়াই ভাগ যাকাত দিতে হবে। যেদিন যাকাতের হিসাব করতে হয়, সোনার মূল্য ধরার সময় ওই দিনের বাজারমূল্য ধরতে হবে। আপনি যেদিন সোনা কিনেছেন, ওই দিনের মূল্য ধরলে চলবে না।

ব্যবসা-পণ্যে যাকাত
যেসব সম্পদের উপর যাকাত দিতে হয়, তন্মধ্য থেকে তৃতীয়টি হলো ব্যবসায়িক পণ্য। যেমন এক ব্যক্তি দোকান খুলেছে । এখন এই দোকানে যত মাল রাখা হয়েছে, সব গুলোর মূল্য বের করে নিবে। মূল্য বের করা হবে এভাবে যে, যদি দোকানের সমস্ত পণ্য আজ এক সাথে কেনা হয়, তাহলে কত টাকা লাগবে। ওই টাকায় আড়াই পার্সেন্ট যাকাত হিসাবে আদায় করবে।

কোম্পানির শেয়ারে যাকাত
যদি কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে থাকে, তাহলে ঐ শেয়ার ও ব্যবসা পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতারাং ঐ শেয়ারের বাজারমূল্য হিসাবে আড়াই পার্সেন্ট যাকাত দিতে হয়। বর্তমান কোম্পানিগুলো নিজেরাই শেয়ারসমূহের যাকাত কেটে নেয়, তবে কম্পানিগুলো শেয়ারের আসল মূল্য ধরে যাকাত কাটে, মার্কেটমূল্য হিসাবে যাকাত কাটে না। যেমন- এক কোম্পানির শেয়ারের আসল মূল্য দশ টাকা, যার বাজার মূল্য পঞ্চাশ টাকা। এখন কোম্পানি তো দশ টাকা হিসাবে যাকাত কাটবে। মাঝখানের চল্লিশ টাকার যাকাত শেয়ার-হোল্ডার নিজে আদায় করবে।

বাড়ি বা প্লট-ফ্ল্যাটের যাকাত
যদি কোনো ব্যক্তি বাড়ি বা প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ক্রয় করে, অর্থাৎ-এই নিয়তে ক্রয় করে যে, আমি এই প্লট বা ফ্ল্যাটের মাধ্যমে মুনাফা উপার্জন করবো, তাহলে ওই প্লট-ফ্ল্যাট বা বাড়ির মূল্যের উপর যাকাত আসবে। তবে যদি বিক্রির নিয়তে ক্রয় না করে, বরং বসবাসের নিয়তে ক্রয় করে কিংবা ভাড়া দেয়ার নিয়তে করে, তাহলে তার মূল্যমানের উপর যাকাত আসবে না। তবে যে ভাড়া আমদানি হবে, তা নগদ টাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে তার উপর আড়াই পার্সেন্ট যাকাত আসবে।

অলংকারের যাকাত না দেয়ার পরিণাম
হাদীস শরীফে এসেছে, এককার রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, আয়েশা (রা:) এর হাতের আঙ্গুলে একটি রুপার আংটি। তখন তিনি তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, আংটিটা কোথায় পেলে? আয়েশা (রা:) উত্তর দিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আংটিটা আমার কাছে ভালে লেগেছে বিধায় আমি এটা সংগ্রহ করেছি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটার যাকাত দাও কি-না? আয়েশা (রা:) উত্তরে দিলেন না, দেই না। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি চাও এর পরিবর্তে আখেরাতে আগুনের আংটি পরানো হোক, তা হলে এর যাকাত দিয়ো না। আর যদি আগুনের আংটি পরিধান করা থেকে রক্ষা পেতে চাও, তাহলে যাকাত আদায় কর।

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অলংকারের যাকাতে অবহেলা করার ভয়ানক পরিণাম থেকে এভাবে সাবধান করেছেন। সুতারাং মহিলাদের মালিকানায় যেসব অলংকার আছে, সেগুলোর যাকাত দেয়ার প্রতি যত্নবান হতে হবে।
‘মহিলাদের মালিকানায় অলংকার’ বলতে ওই সব অলংকার বোঝায়, যেগুলো সে নিজের অর্থ দিয়ে ক্রয় করেছে কিংবা কারো পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছে কিংবা বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে এনেছে কিংবা স্বামী তাকে মোহরানা বাবদ দিয়েছে। যেমন- মোহরানা ছিলো পঞ্চাশ হাজার। বিয়ের সময় তাকে স্বামী যেসব অলংকার দ্বরা সাজিয়ে এনেছে, সেসব অলংকারের ব্যাপারে যেহেতু স্বামী স্পষ্টভাবে কিছু বলেনি, সুতারাং এগুলোর মালিক ছিল স্বামী। এখন যদি স্বামী একথা বলে দেয়, আমি বিয়ের সময় তোমাকে যে অলংকারাদি দিয়েছি, মোহরানা বাবদ সেগুলোর মালিক তোমাকে বানিয়ে দিলাম, তাহলে এই ক্ষেত্রে স্ত্রী অলংকারগুলোর মালিক হয়ে যাবে এবং এগুলোর যাকাত আদায় করা স্ত্রীর উপরই ফরজ হবে; স্বামীর উপর নয়। স্ত্রী ইচ্ছা করলে অলংকারগুলো বিক্রি করতে পারবে, নিজেও পরতে পারবে, কাউকে দিয়েও দিতে পারবে। স্বামীর অধিকার নেই স্ত্রীকে এ থেকে বারণ করার। কেননা, এখন ওগুলোর মালিক স্ত্রী-স্বামী নয়।

সারকথা হলো, সব সম্পদের ক্ষেত্রে এটাই বিধান যে, যে ব্যক্তি যে সম্পদের মালিক, তার উপর ওই সম্পদের যাকাত ফরজ। তবে হ্যাঁ, অনুমতিক্রমে কিংবা সম্মতির ভিত্তিতে কেউ কারো পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করলে হয়ে যাবে। যেমন- স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী কিংবা সন্তানের পক্ষ থেকে বাবা যাকাত আদায় করতে চাইলে অনুমতির ভিত্তিতে তা পারবে। অনুমতি ছাড়া যাকাত আদায় হবে না। কারণ, যাকাতের বিধান প্রত্যেকের ব্যাপারে স্বতন্ত্রভাবে প্রযোজ্য।

বর্তমানে যাকাতের মাসআলা সম্পর্কে মানুষ খুব বেশি অজ্ঞ। যার কারণে অনেকে যাকাত আদায় করে না। অনেকে আদায় করলেও ঠিকভাবে আদায় করে না। পরিণামে যাকাত না দেয়ার শাস্তি সমাজের ঘাড়ের উপর থেকেই যাচ্ছে। আল্লাহর ওয়াস্তে যাকাতের মৌলিক মাসআলাগুলো শিখে নিন। এটা কঠিন কিছু নয়। কারণ, মানুষের সম্পদ থেকে মাত্র তিন ধরনের সম্পদের উপর যাকাত আসে- সোনা- রুপা, নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য। ব্যবসাপণ্য বলতে প্রত্যেক ওই পণ্যকে বোঝায়, যা বিক্রি করার নিয়তে ক্রয় করা হয়। এর উপর যাকাত ফরজ। তাছাড়া বাসা-বাড়িতে ব্যবহার্য যত জিনিষ আছে, যেমন-ফার্নিচার, গাড়ি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদির উপর যাকাত আসে না। তবে হ্যাঁ বাসায় কিংবা ব্যাংকে যে টাকা বা অলংকার সংরক্ষিত আছে অথবা যে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করার নিয়তে ক্রয় করা হয়েছে, তার উপর যাকাত ফরজ। বসবাসের নিয়তে ক্রয়কৃত প্লট-ফ্ল্যাটের উপর যাকাত ফরজ নয়। সারকথা হলো, যাকাত আদায়সংশ্লিষ্ট মাসআলাগুলো খুব কঠিন নয়। একটু খেয়াল করলেই বুঝে নেয়া যায়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রত্যেককে দ্বীনের এই অন্যতম বুনিয়াদটি সহীহভাবে বোঝার এবং সঠিকভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন

✅ আমাদের যাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন 👉 https://bit.ly/3Dx64Ns

#madrasah #qawmimadrasa #Qawmi #balipara #darululoomdeoband #Darul #Hafiz #ramadan2025 #donatenow #QuranHafiz #quranlearning #quranmajeed #দারুল #উলূম #বালিপাড়া #কওমী #মাদ্রাসা #madrasah #qawmimadrasa #Qawmi #balipara #DarulUloom #Hafiz #DonateNow #QuranHafiz #quranlearning #quranmajeed #বিজ্ঞপ্তি #জরুরীনিয়োগ #২০রাকাত #তারাবির